অবন্তিকা
পর্ব এক
প্রসঙ্গঃ নির্বাচন জয় ক্ষমতা ও প্রাপ্তি
ভগবান বা আল্লাহ্ নয়, ঈশ্বরের নামে শপথের আজ একশদিন। বাংলায় শাসকের প্রত্যাবর্তন হয়েছে। আসল পরিবর্তন হয়নি। ‘সুনার বাংলা’ নয় সোনার বাংলা নিজের মেয়েকেই চেয়েছে। আবার। রাজ্যের মাথায় একজন মহিলা, এটা একটু চাপের বৈকি! এখন প্রশ্ন হল, ২০১১ থেকে ২০২১ চাপটা বাড়ল নাকি কমল, নাকি একই রইল? নাকি চাপ টাপ আবার কী- ফুঃ !
কথায় কথায় এভাবে ফুঃ করাটাতে একটা তাচ্ছিল্য আছে। উপেক্ষার ভ্রুকুটি আছে। এটাকে আবার রপ্ত করারও ব্যাপার আছে। সবাই চাইলে রাতারাতি এটাকে রপ্ত করতে পারবে না। সময় লাগবে। এই ধরুন ২০ বছর। সময়টা একটু বেশিই ঠেকল হয়ত, কিন্তু সবাই তো আর উচ্চ মেধার নয়। কারও কারও একটু বেশি সময় লাগে বৈকি! আবার এই কথায় কথায় বৈকি বলাটাতেও একটা হেরে যাওয়া আছে, যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে আসা আছে, আবার বিনয়ও আছে। তবে বিনয় ব্যাপারটা তখনই গ্রাহ্য হবে যখন আপনি উচ্চমার্গের কেউ একটা হবেন অর্থাৎ কেউকেটা হবেন। নিম্নমার্গের এবং নিম্নবর্গের আবার বিনয় টিনয় কী! ওদের সহনশীল সহিষ্ণু হতেই হয়, কারণে হোক কিংবা কারণ ছাড়াই। এটাই নিয়তি।
প্রসঙ্গে ফিরি। ২০১১তে যে কারণে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বাংলায় একজন মহিলা ক্ষমতায় এসেছিলেন, সে কারণটা এখন কিছুটা হলেও একটু করে পরিষ্কার হচ্ছে। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নিজেও এবারের নির্বাচনের আগে নিজের মুখে সে কথা স্বীকারও করেন। সঙ্কট যখন সময়কে ছাপিয়ে যায় তখন ব্যাক্তিটি একবার নিজের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় হয়ত, ব্যাপারটা অনেকটা ওইরকমই লাগছিল। সংকট কেন বলছি, কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দক্ষ শাসক নন, এমনকি সুশাসকও নন, উনি অনেকটা ত্রাতা-র মতো। ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায় বলে’ ওরকম বিজ্ঞাপনের দ্বারস্থ হওয়া সেই সংকটেরই বার্তা দেয় কিছুটা হলেও। এটা আরও পরিষ্কার হয়েছিল, যখন এক সামান্য সাধারণ কর্মীকে ফোন করে বলতে হয়েছিল, ‘তুমি ইয়ং ছেলে, এবারের মতো ভোটে আমাদের একটু সাহায্য করে দাও না।’ ছেলেটি মুখের উপর না করে দেয়। তারপরেও বলতে থাকেন ‘নন্দীগ্রাম যাদের দেখে নিতে বলেছিলাম তারা তো দেখেনি, আমাকেও নন্দীগ্রাম যেতে দেওয়া হয়নি। তাই তোমার সমস্যা বা তোমার মতো অনেকেরই সমস্যার কথা আমি ডিটেলস এ জানতাম না, এবার আর এমন হবে না’ বলে উনাকে বোঝানোর একটা মরিয়া প্রচেষ্টা করেন। লোকটি আরও অনেক কথা বলে শেষে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বলে ফোনে কেটে দেন।’
এমন মরিয়া কথোপকথন বাংলা শুনেছে। রাজনীতিতে এ আর এমন কী, মনে করে অনেকেই ব্যাপারটিকে লঘু করে দেখেছে। মিডিয়ার কাছে এই খবর তো তখন হটকেক। কারণ, বাংলা শুধু বিতর্কই ভালোবাসে না, গরম গরম মুখরোচক খবরেও ভীষণ আগ্রহী। বিরোধীরাও বেশ কিছুদিন এটাকে নিয়ে নেমে পড়ে ভোট প্রচারে। দেখা মেলে কিছু জাত গোখরোদেরও। দুধ কলা দিয়ে কিছু বছর আগেও অব্দি যাদের পোষা হত খোদ মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় তারাও নেমে পড়েন মাঠে। খেলা জমে ওঠে।
তাই দুহাজার একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা দেখেছে, নির্বাচন যা হয়েছে তার চেয়ে খেলা হয়েছে বেশি। কটূক্তি আক্রমণ ছাপ্পা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর আওতাধীন গোলাগুলি মৃত্যু পর্যন্ত নির্বাচনের দোসর হয়ে ওঠে। ‘খেলা হবে’ এটা বলাই হয়েছিল সুপ্রিমোর তরফে। পরে ‘বাবু যত বলে, পারিষদ দলে বলে তার শতগুণ’ এমনটাই হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রচারে প্রসারে মিছিলে মিটিঙে। সব মিলিয়ে এবারের নির্বাচন অত্যন্ত বিনোদনপূর্ণ ছিল। এতকিছুর পরেও বাংলা নিজের মেয়েকেই চেয়েছিল।
কেন? এই প্রশ্নটি আজ জরুরি। ‘হিন্দু খতরেমে’ ‘মুসলিম খতরেমে’- এর জন্য নয়, গণতন্ত্র খতরেমে তার জন্য। এখন যদি বলা হয়, গণতন্ত্র টনতন্ত্র আবার কী? ফুঃ ! তাহলে তার জন্যও বৈকি!
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের ফলাফলে অনেকেই হয়রান হয়েছিলেন। বুদ্ধিজীবী বিশ্লেষক বোদ্ধা ছোটখাটো রাজনেতিক সচেতন মানুষও হয়েছিলেন হয়রান। এমনকী যে মিডিয়ার কাজই হল, সারাক্ষণ মানুষকে হয়রান করা, বিভ্রান্ত করা, আতঙ্কিত করা, তারাও চমকে গিয়েছিলেন, তাঁদের পরিসংখ্যান না মেলায়। সর্বোপরি, হয়রান তো মুখ্যমন্ত্রী নিজেই হয়েছিলেন, কারণ ক্ষমতা চলে যেতে পারে এমন সংকট ও সম্ভাবনা তাঁর মাথাতেও যে চেপে বসে ছিলনা, এমন তো নয়।
তাই ফলাফল বেরনোর পর তড়িঘড়ি শপথ নেওয়ার কাজটি সেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। নিয়েওছিলেন। কারণ, খোদ রাজ্যপালের সহযোগিতায় এবং পরম উৎসাহে বিরোধীরা যেভাবে ভুয়ো খবর ছড়াতে শুরু করেছিল, এবং বিজেপি গরিষ্ঠ এলাকাগুলোতে মারপিঠ খুনোখুনি বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া শুরু করে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবী তুলছিল তাতে মুখ্যমন্ত্রী শপথ নিয়ে রাজ্যের শাসনভারের রাশ নিজের হাতে তুলে না নিলে বিজেপিকে রোখা মুশকিল হচ্ছিল। কারণ, বিরোধী হিসেবে থেকে কোথায়, কখন, কীভাবে রাজ্যের রাজ্যপালকে কাজে লাগানো যায়, এটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে ভালো কেউ জানে বলে মনে হয়না এই বাংলায়। যার অনুপ্রেরণায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর রাজনীতিতে আসা লড়াই এবং টিকে থাকা হোক না কেন, রাজনীতিতে পুষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার সফর যাত্রাটা একটি ঘোষিত সাম্প্রদায়িক দল বিজেপির হাত ধরেই শুরু হয়েছিল। তাই তৃণমূল সুপ্রিমো এবং বিজেপির ইকোয়েশন সাত পাঁচ এর সূত্রে ফেলে মেলানো যাবেনা।
এবারের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আগের দু’বারের একটু সামান্য পার্থক্য আছে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নিজের কেন্দ্র থেকে এবারে জিতে আসেননি। ব্যাপারটি যেমন বিতর্কিত তেমনি ধোঁয়াশার, ধাঁধারও। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও খুব বেশিদূর এগোলেন না ব্যাপারটি নিয়ে। এই করবো, সেই করবো বলে দুদিন চেঁচামেচি করেই গুম মেরে গেলেন কেমন।
প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পর নিয়ম করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতেন। প্রথম মাস প্রথম একশ দিন, প্রথম বছর উনি কি কি করেছেন তাঁর খতিয়ান দিতেন। সাংবাদিকরা গালে হাত দিয়ে চুপ করে সুবোধ বালকের মতো শুনতো। যেন লক্ষ্মী ভাইগুলো মমতাময়ী দিদির কাছে রূপকথার গল্প শুনছে। প্রশ্ন নেই, পাল্টা প্রশ্ন নেই, কথার সাথে কাজের মিল নেই, তা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই!
এ প্রসঙ্গে একটু বলে নিই, সংবাদ বা খবর গল্প হয়ে ওঠার কাজটা এবং পরিবেশনের ধরণটা বদলাতে শুরু করে ছিল অনেকদিন আগে থাকতেই। আরও একধাপ এগিয়ে ২০০০-এর পর থেকে শুরু করে বদলে যেতে লাগল সংবাদের ভাষা। ২০০৫-এর পর থেকে তো একেবারে খোলনলচে বদলে গেলো সবকিছু। বাজার ঠিক কোন গুলোকে গিলছে, কীভাবে গিলছে সেটা মুখ্য হয়ে উঠতে লাগল। ২০১১-এর পরও যেটুকু অস্তিত্ব ছিল, তার এখন কোনওই অস্তিত্ব নেই। অস্তিত্বহীনতায় অভ্যস্ত হতে শুরু করেছিল বাংলা আরও ছ’ সাত বছর আগে থেকেই।
সেই কারণেই, হ্যাঁ সেই কারণেই সাংবাদিকদের ‘দালাল’ এবং দু’পয়সার সাংবাদিক’ কথাগুলো শুনতে হয়, হচ্ছে, হবেও এবং সাংবাদিকরা তাতে কিছুই মনে করেনা। সাংবাদিকরা মনে করে, এসব কথায় কান দিলে না খেয়ে মরতে হবে। অতএব চতুর্থস্তম্ভ বস্তুটি একেবারে কোমায়। ভেণ্টিলেশন এ। সংবাদ জগতের এহেন দুর্দশা দেখে এবারের নির্বাচনের আগে বাংলায়, অখিলেশ এর নির্দেশে জয়া বচ্চনকে মাত্র কয়েক মিনিটের একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বলতে দেখা গেল প্রায় ধমকের সুরেই অনুরোধ করেন , ‘একটু সত্য বলুন, সত্য লিখুন।’ জয়াজি হয়ত জানেনই না, বাংলায় সত্যের চর্চা করলে না খেয়ে মরতে হয়। কারণ, শাসকের থাবা যেখানে যেখানে পড়বে সেগুলো কীভাবে পঙ্গু হতে থাকবে তার উদাহরণ যেমন কেন্দ্রে রয়েছে, তার কোনও অংশে কম নেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেও।
কিন্তু আগেই বলেছি, বাংলার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে শাসকের ভূমিকায় কম, ত্রাতার ভূমিকায় দেখতে বেশী পছন্দ করেছে বাংলার মানুষ, তাই বাংলা নিজের মেয়েকেই চেয়েছে। বিপুল ভোটে জিতিয়ে এনেছে বাংলা। পরিসংখ্যান এ দেখা গেছে, একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের একচেটিয়া ভোট পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষজন ‘অনুগ্রহ’ নিয়েই এতো আত্মতুষ্টি যে ‘অধিকার’ নিয়ে এদের কোনওই হেলদোল নেই। অবশ্য তারও কারণ আছে। কারণগুলোকে জিইয়ে রাখা আছে। এই কারণগুলোই বাংলা তথা ভারতের রাজনীতিতে শাসকদলের ইউএসপি-র কাজ করে।
প্রসঙ্গে ফিরি আবার। তো এ হেন খেলা প্রিয় শাসকের প্রত্যাবর্তনে আসল পরিবর্তনকামীরা এতটাই মনঃক্ষুণ্ণ ও হতাশ হয়ে পড়লেন যে, রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার জন্য যে কোনও সুযোগকে কাজে লাগাতে প্রায় আদা জল খেয়ে লেগে পড়ল। নির্বাচনের পরে রাজ্যের শাসককে নাস্তানাবুদ করতে রাজ্যপাল নিজের কাঁধেও তুলে নিয়েছিলেন সে ভার। নেমে পড়েছিলেন রাস্তায় গলায় গামছা জড়িয়ে। ক্ষমতার অপব্যবহার করতে গিয়ে পদমর্যাদার কথাটিকে তিনি বোধহয় আমলই দিতে চান নি। সেও দেখল বাংলা।
বাংলার প্রাপ্তিগুলোর দিকে একটু নজর ঘোরানো দরকার। তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মসনদে বসেই সবার আগে স্বরাষ্ট্র দফতরের অদল বদল শুরু করলেন। জরুরি ছিল নিশ্চয়। এটা সাধারণ মানুষের বোঝার বিষয় নয়।
ফলাফলের পর মুখ্যমন্ত্রীর মনে পড়ল, করোনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে বাংলায়, তাই লকডাউন জরুরি। গত বছর লকডাউন তুলে নেওয়ার আগে বলা হয়েছিল করোনাকে পাশবালিশ করে নিয়ে থাকতে হবে। সেই পাশবালিশ নিয়ে ভোটের সময় এমন খেলা শুরু হল যে করোনা তার ভয়াবহ রূপ দেখাতে খুব বেশি সময় নেয়নি। আমরা কখনও কোনও ভয়াবহতার কাছে কিছু শিখিনা। কারণ, আমাদের শিরদাঁড়া এতটাই সোজা এবং শক্তপোক্ত যে আমাদের কিছু শিখতে হয়না।
লকডাউন তড়িঘড়ি ঘোষণা না করলে কেন্দ্রীয় দলগুলোর নানা অছিলায়, বলা নেই, কওয়া নেই দমকা সফরগুলো আটকানো যাচ্ছিল না। যেমন আটকানো যাচ্ছিল না করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অনেকটা তেমনই। দিল্লির কেন্দ্রীয় দলের কলকাতা অভিযান আটকানো গেলেও কেন্দ্রের হেনস্থা চলেছে দফায় দফায়। নারদার জের। ব্যাপারটা আর কিছুইনা, চোরের মায়ের বড়ো গলা-র মতো লাগল আর কি। কারণ, আইন ব্যবস্থাকে দলীয় থাবার ঊর্ধ্বে রাখতে না পারলে তা হাস্যকর ও বালখিল্য লাগে ব্যাপারটা। তো সে সবের মধ্যে দিয়েই বাংলা এগিয়ে থাকল এগিয়ে রাখল। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি ছাড়াই।
নির্বাচনে জয়ী হওয়া বিশাল ব্যাপার। ক্ষমতা। ক্ষমতার জেরে এবং জোরে কী না হয়। কিন্তু যারা জেতায় তারা সেই তিমিরেই রয়ে যায়, যে তিমিরে ছিল। ক্ষমতাহীন-নিরাপত্তাহীন-আশ্রয়হীন অনেকে আবার চালচুলোহীন হয়ে পড়ে। অবস্থার পরিবর্তন দুই-এক জায়গায় বা দুই-এক জন এর যে একেবারেই হয়না এমন নয়। হয়। নইলে শাসকের চলবে কী করে। বরাবরই ফলপ্রকাশের পরেই যে নির্মম দৃশ্য দেখা যায় তা হল, নিচুতলার দলীয় কর্মীদের উপর আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলতেই থাকে। একে অপরের প্রতি আরোপ-দোষারোপ চলতেই থাকে। যে জায়গায় যে দলের প্রভাব প্রতিপত্তি বেশি সে জায়গায় চলে তাদেরই তাণ্ডব। দু একটা জায়গায় ব্যতিক্রম আছে অবশ্য। এতে উপরতলার কর্মীদের কিছু যায় না আসেনা। নিচুতলার কর্মীদের নিয়ে এমনকি তাদের মৃত্যু নিয়েও একটা নির্লজ্জ রাজনীতি হয়। যেটা কাম্য নয়।
প্রশ্ন হল, এই যে গণতন্ত্র উৎসবের নামে প্রতি নির্বাচনের আগে পরে সাধারণ মানুষকেই বলি হতে হচ্ছে সর্বত্রই, তার সমাধান কি কিছুই নেই? কারণ, যে মানুষটি মরছেন তার পরিবার যে ক্ষতির মুখে পড়ছেন তাতে আর কারও কিছু যাক না যাক, সেই পরিবারটি তো শেষ হয় সব দিক থেকে। সাধারণ মানুষ কেন বোঝে না, কেন সচেতন হয় না বলে হাতের উপর হাত গুটিয়ে বসে থাকা যাবে না। নিরাপদ, ঝুঁকিহীন জীবন প্রত্যেকেই চায়। তাই অনেক কিছুই দেখেও দেখেনা। তবে রাজনেতিক সচেতনতা বাড়ানো ভীষণ দরকার আজ। এখনই। কেননা, তৃতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এবার একটু অন্যরকম সম্ভাবনার জন্ম নিচ্ছে। সম্ভাবনার দিকটি উড়িয়ে না দিয়েও বলা যায়, কোনও শাসক চায়না তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী। এক্ষেত্রে কেন্দ্র রাজ্য একই জায়গায় রয়েছে। যেমন ক্ষমতার লোভ তেমনই উচ্চাকাঙ্খা। কেন্দ্রের ভুল জিনিষ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া সহজ। রাজ্যে বসে রাজ্যের ভুল জিনিষগুলি বাতলানো কঠিন। বাংলা বিজয়ের পর বাংলাকে লক্ষ্মীর ঝাঁপি ধরিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী চললেন ভারত বিজয়ে। এটি আগামীর জন্য কি কি সম্ভাবনা বয়ে আনতে পারে তা তো সময়ই বলবে। তবে নজরে রইল অনেক কিছুই।
এতক্ষণ যা বলার চেষ্টা করা হলো, তার থেকে আরও বেশি বেশিই মানুষ জানে। মুখ্যমন্ত্রীকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে এতোগুলো কথা বলার মানে বাংলা তাঁকে দেখেই ভোট দিয়েছে। তাতে অনেক অপছন্দ নেতাকেও ভোট দিতে হয়েছে। ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষিত প্রাথীর ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ ছুঁতে পারেনি সে নিয়ে খুব একটা কথা হয়নি। কথা হওয়া দরকার। প্রশ্ন তোলা দরকার। তাই, বিশ্লেষণী দৃষ্টিতে যা বাংলায় হতে পারত, হয়নি, সেগুলো বুঝে নেওয়ার দায় তো একটুখানি থেকেই যায়। থেকে যায় সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতাও। নইলে চমকপ্রদ অনুগ্রহ নিয়ে বুঁদ হয়ে থাকতে হবে। ‘হিন্দু খতরেমে’, ‘মুসলিম খতরেমে’, খেলা চলতে থাকবে।
গণতন্ত্র বাঁচবে একমাত্র জনগণের রাজনেতিক সচেনতার ভিত্তিতে।